বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১, ১০:৫০ অপরাহ্ন
এইচ আর হিরু, গাইবান্ধাঃ
পবিত্র ঈদুল-আযহাকে সামনে রেখেগাইবান্ধার কামাররা ব্যস্ত সময় পারকরছেন। দম ফেলবারও সময় নেই তাদের।
দিন-রাত টুং টাং শব্দ ভাসছে কামারপাড়ায়। আর মাত্র ৫ দিন পরই ১২ আগষ্ট আগামী সোমবার মুসলমানদের
অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল-আযহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস টুকরো করার জন্য দা.কাটারী.
ছুরি বটি.চাপাতি অপরিহার্য। আর এসব চাহিদা মিটানোর জন্য দা. বঁটি. কাটারী ও ছুরিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি
নিরোলস ভাবে তৈরি করে যাচ্ছেকামাররা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়.জেলার হাট. বাজারসহ বিভিন্ন হাটে ঘাটে কামারপাড়ায় হাপরে আগুনের তাপে ঘাম ঝরছে
কামারের শরীর বয়ে। ইস্পাত কঠিন হাত দুটি আঘাত করছে লোহার বস্তুতে। শক্ত আঘাতে বদলে যাচ্ছে লোহার ধরন।
তৈরি হচ্ছে কোরবানির গোশত কাটার অস্ত্র। কামারপাড়ার এ দৃশ্য নতুন নয়। তবে কোরবানির ঈদকে ঘিরেই বাড়ে
তাদের এ কর্মব্যস্ততা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বঁটি. ছুরি. কাটারি. দা. বেকি. কুঠার.খুন্তা ও লাঙ্গলের
ফলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বানাচ্ছে কামাররা। এসব ব্যবহার্য জিনিস স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি জেলা
শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে পাইকারী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে
কামার-শিল্পের দুর্দিন চললেও আসন্ন পবিত্র ঈদুল-আযহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প।
শেরপুর উপজেলার শিশুপার্ক এলাকার কামার শিল্পী দিলিপ কর্মকার জানান. এক সময় কামারদের যে কদর ছিল
বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রাদির
প্রতি মানুষ তার চাহিদা হারাচ্ছে। হয়তো বা এক সময় এই পেশা আর থাকবেনা। তিনি আরো বলেন গোশত কাটা বা
চামড়া ছড়ানোর ছোট-বড় ৮ থেকে ১০ ধরনের ছুরি-চাকু তৈরি করেন। বিভিন্ন প্রকারভেদে ২০ টাকা থেকে শুরু করে
দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। এছাড়াও বঁটি-দা ১২০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২০০-১৪০০ টাকা
দামে বিক্রি হয়। পশু জবাইয়ের মাঝারি ছুরি ২৫০-৬৫০ টাকা. বড় ছুরি ৫০০-১,০০০ টাকাও বিক্রি করেন তারা।
নলডাঙ্গা বাজারের দুলাল কামার বলেন.আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তাদের পেশার সূত্র ধরে আমার
জীবনেরও শেষ মূহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। সারাদিন চাকু.বঁটি. কাটারী তৈরি করে যা আয় হয়. তা দিয়েই পরিবার-
পরিজন নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। কেননা আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় আমার এই পেশা ছেড়ে অন্য কোন ভাল
পেশায় যাওয়ার সুযোগ নেই। সারা বছর তেমন কোন কাজ না হলেও পবিত্র কোরবানির ঈদ আসলে আমাদের ভাল কাজ
হয়. যা দিয়ে সারা বছর চলার জন্য কিছু আয় জমিয়ে রাখি।
তিনি আরও বলেন. এই পেশায় আমরা যারা আছি খুবই অবহেলিত। এই পেশায় সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়।
কোরবানি ঈদ আসলে কিছু টাকা আয় করতে পারি। তবে সরকারি ভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের কামাদেরকে
সুদ মুক্ত ঋণ দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুরে
দাঁড়াবে। সচেতন মহল মনে করেন. কামার শিল্পীদের সরকারী ভাবে কিছু আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করা দরকার তা
না হলে হয়ত এ শিল্প একদিন হারিয়ে যাবে।