মনির আহমেদ : র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আপোষহীন ভাবে বিভিন্ন অপরাধ দমনে ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে র্যাব এ পর্যন্ত জঙ্গি, অপহরণকারী, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, মাদক ব্যবসায়ী, এজাহারনামীয় আসামী, মলম ও অজ্ঞান পার্টি, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌরাত্ব্য প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। ইতিমধ্যে বর্ণিত এলাকায় র্যাব বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌরাত্ব্য অনেকাংশে কমে আসে। তথাপি বিমানবন্দর থানা এলাকায় কতিপয় অজ্ঞান ও মলম পার্টি এখনো সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যায়। সম্প্রতি এই চক্রের সদস্যরা সাধারন পথচারী যাত্রী এবং বিমানবন্দরে প্রবেশরত হজ্জ্ব যাত্রীদের নিকট হতে কৌশলে মোবাইল ফোন ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
এছাড়াও তারা বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাসে উঠে সাধারণ যাত্রীদের কৌশলে অজ্ঞান করে তাদের নিকট হতে মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রীসহ সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়। হজ্জ্ব কার্যক্রম-২০১৯ উপলক্ষ্যে হজ্জ্ব ক্যাম্প, আশকোনাতে র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকার অস্থায়ী ক্যাম্পে একটি অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এই অভিযোগ কেন্দ্রে হজ্জ্ব যাত্রীদের নিকট হতে মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা এবং মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই চক্রের সদস্যরা ছিনিয়ে নিয়েছে মর্মে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া যায়। এই সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জুলাই ২০১৯ ইং তারিখ আনুমানিক ১৮১০ ঘটিকায় র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, রাজধানীর বিমান বন্দর থানাধীন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এর প্রবেশ মূখে গোল চত্ত্বর এর উত্তর পশ্চিম পাশের্¡ ফুটওভার ব্রীজ এর নিচে পাকা রাস্তার উপর অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ অজ্ঞান ও মলম পার্টি চক্রের সক্রিয় সদস্য ১) মোশারফ হোসেন মাহিন (২৪), পিতা- মৃত শাহ জামাল বাদল, মাতা- মোছাঃ মোর্শেদা বেগম, সাং- ফুল বাড়ীয়া মুন্সিপাড়া, ওয়ার্ড নং-০৭, থানা- জামালপুর সদর, জেলা- জামালপুর, বর্তমান ঠিকানা- বটতলা, সোনাবানু মাজার সংলগ্ন, টঙ্গী বাজার, হাকিম মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা-টঙ্গীপূর্ব, জিএমপি, গাজীপুর, ২) মোঃ আমিনুল ইসলাম (২০), পিতা- মৃত আলী, মাতা- মোছাঃ হাফেজা বেগম, সাং- নামাপাড়া, থানা- ত্রিশাল, জেলা- ময়মনসিংহ, বর্তমান ঠিকানা- কেরানীরটেক, আমতলী, তারা মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া, থানা- টঙ্গীপূর্ব, জিএমপি গাজীপুর, ৩) মোঃ চাঁদ হাওলাদার (১৯), পিতা- মোঃ ইব্রাহীম হাওলাদার, মাতা-মোছাঃ নাজমা বেগম, সাং- শিয়ালকাটি, পোষ্ট-বাইশারী, থানা- বানারীপাড়া, জেলা- বরিশাল, বর্তমানা ঠিকানা- সুইচ গেইট, লাল খায়ের বাড়ির ভাড়াটিয়া, থানা- উত্তরা পশ্চিম, ডিএমপি ঢাকা, ৪) মোঃ রবিন মিয়া (২৫), পিতা- মোঃ মিন্টু মিয়া, মাতা- মোছাঃ রেখা বেগম, সাং- কেরানীরটেক আমতলী, থানা- টঙ্গীপূর্ব, জিএমপি গাজীপুর, ৫) মোঃ বাবু (৩০), পিতা- মৃত শহীদ, মাতা- রেহেনা বেগম, সাং- সাদারদিয়া, পোষ্ট- পালের বাজার, থানা- দাউদকান্দি, জেলা- কুমিল্লা, বর্তমান ঠিকানা- মিরা বাজার, রাজনের বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা- জয়দেবপুর, জেলা- গাজীপুর, ৬) মোঃ রফিক (২০), পিতা- মোঃ হালিম, মাতা- মৃত রহিমা বেগম, সাং- বইলদাপাড়া, পোষ্ট- ঝরগাচর, থানা- শেরপুর সদর, জেলা- শেরপুর, বর্তমান ঠিকানা- পানির ট্যাংকির সামনের বস্তি, মামুন মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া, সেক্টর-০৯, থানা- উত্তরা পশ্চিম, ডিএমপি গাজীপুর, ৭) স”িত দাস (১৯), পিতা- দীলিপ দাস, মাতা- মালতি দাস, সাং- কাসন, পোষ্ট- ফুলবাড়িয়া, থানা- ফুলবাড়িয়া, জেলা- ময়মনসিংহ, বর্তমান ঠিকানা- আরিচপুর, বউ বাজার, রুবেল সরকার বাড়ী, থানা- টঙ্গীপূর্ব জিএমপি গাজীপুর’দেরকে গ্রেফতার করে। এসময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ০৩ টি মলম, ০৫ টি স্পেয়ার ব্লেড, ০৩ টি মোবাইল ফোন ও ৭৫০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
ধৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সংঘবদ্ধ অজ্ঞান/মলম চক্রের সক্রিয় সদস্য। এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ বিমান বন্দর এলাকায় বিদেশ গমনাগমনের উদ্দেশ্যে আগত লোকজন ও অত্র এলাকায় চলাচলকারী বাসযাত্রী, পথচারীদের গতিরোধ করে কৌশলে বোকা বানিয়ে তাদের চোখে চেতনা নাশক মলম প্রয়োগের মাধ্যমে অজ্ঞান করে তাদের নিকটে থাকা মোবাইলফোনসহ নগদ টাকা এবং মূল্যবান অন্যান্য জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে যায় এসময়ে কেউ টের পাইলে ও বাঁধা প্রদান করিলে তাহাকে ভয় দেখাইবার জন্য তাহাদের নিকটে থাকা স্পেয়ার ব্লেড দিয়ে শারীরিক ভাবে আঘাত করে। ধৃত আসামীরা আরো জানায় যে, গত ১৫ জুলাই ২০১৯ ইং সন্ধ্যালগ্নে তাহারা বিমানবন্দরে প্রবেশরত হজ্জ্ব যাত্রীদের আগমনকে লক্ষ্য করে সেখানে অবস্থান করছিল বলে স্বীকার করে।
হজ্জ্ব যাত্রীসহ অন্যান্য যাত্রীগণ এই ফুট ওভার ব্রীজ পার হওয়ার সময় তারা তাদের ব্যাগসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এছাড়াও ধৃত আসামীরা শশা, বরই, আচার ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্যে চেতনানাশক রাসায়নিক তরল পদার্থ মিশিয়ে সাধারন মানুষকে অজ্ঞান করে তাহাদের সর্বস্ব লুটে নেয়। চেতনা নাশক ওষুধ প্রয়োগের ফলে অধিকাংশ ভিকটিম ২৪-৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত সজ্ঞাহীন থাকে। মাত্রাতিরিক্ত চেতনা নাশক ওষুধ প্রয়োগের ফলে অনেক ভিকটিমের মানসিক বিকারসহ বিভিন্ন শারিরীক জটিলতা দেখা দেয় বলে ধৃত আসামীরা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। বিষয়টি আপনাদের পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য প্রেরণ করা হলো।