সোমবার, ০৮ মার্চ ২০২১, ০৬:৪২ অপরাহ্ন
র্যাবের অভিযানে গাজীপুর জেলার বোর্ড বাজার এলাকা হতে হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী, অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী এবং জেএমবি’র অন্যতম সুরা সদস্য মোঃ মামুনুর রশিদ@রিপন@রেজাউল করিম@আবু মুহাজির গ্রেফতার ও নগদ ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭ শত ৫৫ টাকা উদ্ধার। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাব জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার ঘটনায় দ্রুততম সময়ে সাড়া দিয়ে প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল অভিযানের ক্ষেত্র তৈরিতে অনবদ্য ভূমিকা রেখে সর্বমহলে প্রসংশনীয় হয়েছে। হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা ঘটনা পরবর্তী র্যাব অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় রেখে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জড়িত জঙ্গি সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে কার্যকরী উদ্যোগ অব্যাহত রাখে। এ ক্ষেত্রে জেএমবির আমির সারোয়ার জাহানের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। পরবর্তীতে র্যাবসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি বিরোধী সাঁড়াশী অভিযানের ফলে অনেক জঙ্গি সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিদের পূনরায় সক্রিয় হবার বিষয়টি গোচরীভূত হলে চট্টগ্রাম, রংপুর ও চাপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে র্যাব কর্তৃক জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি, গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের প্রদত্ত তথ্য উপাত্ত ও অভিযানে প্রাপ্ত আলামত সমূহ বিশ্লেষণ এবং সাইবার পেট্রোলিং এর মাধ্যমে জঙ্গিদের উপর র্যাবের নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গত ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখ ২৩:১৫ ঘটিকায় গাজীপুর জেলার বোর্ড বাজার এলাকা হতে হলি আর্টিজান হামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী, অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী এবং জেএমবি’র অন্যতম সুরা সদস্য মোঃ মামুনুর রশিদ@রিপন@রেজাউল করিম@আবু মুহাজির (৩০), পিতা -মৃত নাছিরউদ্দিন, সাং-শেখেরমাড়িয়া, থানা- নন্দীগ্রাম, জেলা- বগুড়াকে গ্রেফতার করে। বর্ণিত অভিযানে ০১টি ডায়েরী, ০৪টি খসড়া মানচিত্র এবং নগদ ১,৪৭,৭৫৫/-টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মামুনুর রশীদ @রিপন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার স্বীকারোক্তি প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গি মামনুর রশীদ@রিপন’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলায় জন্ম গ্রহণ করে। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে। সেখানে সে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যায়ন করে। পরবর্তীতে তার পিতা তাকে মাদ্রাসা শিক্ষায় ভর্তি করিয়ে দেয়। সে ঢাকার মিরপুর, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও নওগাঁর বিভিন্ন মাদ্রসায় অধ্যায়ন করে। সর্বশেষ সে ২০০৯ সালে চাপাইনবাবগঞ্জের মাদ্রাসাতুল দারুল হাদিস হতে দাওরা-ই হাদিস সম্পন্ন করে। অতপর সে বগুড়ার সাইবার টেক নামক একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে অফিস এ্যাপ্লিকেশন কোর্স সম্পন্ন করে উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করে।
গ্রেফতারকৃত জঙ্গি মামুনুর রশীদ@ রিপন এর জঙ্গিবাদে অর্ন্তভূক্তির বিষয়ে জানা যায় যে, সে ২০১৩ সনে বগুড়ায় সাইবার টেক নামক কম্পিউটার প্রতিষ্ঠিানে চাকুরীরত অবস্থায় তার পূর্বে পরিচিত ডাঃ নজরুল কর্তৃক জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। এ ভাবে ধীরে ধীরে সে জেএমবির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে। জেএমবিতে অনুর্ভূক্তির পর ডাঃ নজরুল তার সাংগঠনিক নাম দেয় “রিপন”। পূর্বে সে “রশিদ” নামে পরিচিত ছিল। প্রাথমিকভাবে রিপনের দায়িত্ব ছিল ইয়ানতের (চাঁদা) সংগ্রহ করে ডাঃ নজরুলের নিকট পৌঁছে দেয়া। ডাঃ নজরুল উক্ত সময়ে জেএমবি এর একাংশের আমীর ছিল। ডাঃ নজরুলের আস্থাভাজন হিসেবে সে অল্প সময়ের মধ্যে ডাঃ নজরুলের (জেএমবি উক্ত অংশের) সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
নবনিযুক্ত জেএমবি’র আমীর হিসেবে সারোয়ার জাহান সংগঠনের জন্য নতুন করে অর্থ সংগ্রহ ও দাওয়াতী কার্যক্রম বেগবান করার উদ্যেগ হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে মামুনুর রশিদ @ রিপনের দায়িত্বধীন এলাকায় বিকাশের দোকান লুঠ করে ৬ লক্ষ টাকা, সিগারেট বিক্রেতা হতে ছিনতাই করে ১ লক্ষ টাকা এবং গাইবান্ধায় অপর এক ঘটনায় ১ লক্ষ টাকাসহ মোট ৮ লক্ষ ছিনতাইকৃত অর্থ জেএমবি আমীর সারোয়ার জাহান এর নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। ইতিমধ্যে জেএমবি আমীর সারোয়ার জাহানের মাধ্যমে জঙ্গিদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতা জঙ্গি আব্দুল্লাহ’র সাথে ও তার পরিচয় হয়।
জেএমবি এর উক্ত অংশের সাথে তামীম চৌধুরীর অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে সে জানায় যে, ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে তামীম চৌধুরী ও সারোয়ার জাহানের গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে স¥ারক পত্র প্রস্তুত করা হয়। উক্ত সমঝোতার ভিত্তিতে সারোয়ার জাহানকে আমীর নির্বাচিত হয় এবং সাংগঠনিক নাম দেওয়া হয় “শায়েখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ”। উক্ত বৈঠকে সাদ্দাম @ কামাল, শরিফুল @ রাহাত এবং গ্রেফতারকৃত মামুদুর রশিদ @ রিপনসহ আরও কয়েক জন উপস্থিত ছিল। তন্মধ্যে গ্রেফতারকৃত মামুনুর রশীদ @ রিপনও সুরা সদস্য মনোনীত হয়।
জেএমবি’র সুরা সদস্য হিসেবে মামুনুর রশীদ @ রিপনের দায়িত্ব ছিল অর্থ সংগ্রহ করা, সামরিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরণ সরবরাহ করা। এ বিষয়ে সে আরও জানায় যে, সুরা সদস্যরা জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত থাকত। সংগঠনের সিদ্ধান্তে গ্রেফতারকৃত সূরা সদস্য মামুনুর রশিদ @রিপনের নেতৃত্বে একটি দল ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে পার্শ্ববর্তী দেশে গমন করে অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, হলি আর্টিজান হামলার পূর্বে মামুনুর রশিদ আনুমানিক ৩৯ লক্ষ টাকা সারোয়ার জাহানকে প্রেরণ করে। সে হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনা ও অস্ত্র সরবরাহের সাথেও যুক্ত ছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলাতার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংগঠিত হয়েছে। উক্ত জঙ্গি হামলার অধিকাংশই রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন জঙ্গি হামলাগুলো পরিচালিত করার পূর্বে তারা মহড়া করে অনুশীলন করত। এ ধরনের একটি অনুশীলন মহড়া চলাকালীন সময়ে দূর্ঘটনায় এপ্রিল ২০১৬’তে বগুড়ায় সুরা সদস্য ফারদিন ও অপর এক সক্রিয় জঙ্গি সদস্য তারিকুল ইসলাম @ জুয়েল নিহত হয় বলে জানা যায়।
হলি আর্টিজান ঘটনার পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশী অভিযানের ফলে বাংলাদেশের জঙ্গিরা নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। তখন আত্মগোপনে থেকে মামুনুর রশীদ পুনরায় জঙ্গিদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এ উদ্দেশ্যে সে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে জঙ্গিদের সংগঠিত করতে থাকে। সম্প্রতি তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ম্পর্শকাতর স্থানসহ আদালত প্রাঙ্গনে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করে। যাহাতে বিচার বিভাগের সাথে জড়িতদের ভিতরে ভীতির সঞ্চার করা যায় এবং সাধারণ মানুষকে আতংকিত করে বিদেশে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়।
গ্রেফতার জঙ্গির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।