সুমন ঠাকুরগাঁও : একসময়ের জনপ্রিয় ডাক পিয়নের একটি ডাকে ঘুম ভাঙ্গে ও বুঝি আমার চিঠি এলো’ প্রখ্যাতশিল্পীর এই খ্যাতনামা সঙ্গীত এখন আর মানুষের মনে নাড়া দেয়না। যুগের পরিক্রমায় গানটির সমাজ বাস্তবতা দৈনন্দিন জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।কবি মহাদেব সাহার ‘চিঠি দিও’ কবিতার মতোও এখন আর কেউ তার প্রিয়তমাকে আকুতি করে বলে না ‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও/ আঙ্গুলের মিহিন সেলাই/ ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও, এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো/ অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।’
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায়, তথ্য ও প্রযুক্তির থাবায় আজ বন্দী হয়ে আছে এক সময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম চিঠি, ডাকপিয়ন, ডাকবক্স ও ডাকঘর। এখন আর আগের মতো কদর নেই এই প্রতিষ্ঠানটির। প্রিয়জনের খবরা খবর পেতে এখন আর কারো ডাকপিয়নের হাকের অপেক্ষা করতে হয় না। চিঠির আশায় ঘুরতে হয় না ডাক পিয়ন থেকে ডাকঘরে।
মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের কল্যানে চিঠির প্রতি কমবেশি সবাই আগ্রহ হারিয়েছে। আধুনিক এই যন্ত্র সভ্যতার যুগে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে চিঠি ! মোবাইল, ই-মেইল আর প্রযুক্তির ইনবক্স এখন ডাকবক্সের নতুন সংস্করণ। মোবইল ফোনের ম্যাসেজের যান্ত্রিক সুরেলা রিং টোনের কবলে ডাকপিয়নের ‘চিঠি এসেছে…চিঠি…’ এমন কথাও বিলুপ্ত। চিঠি ভর্তি ডাকঘরে এখন চিঠির প্রচলন নেই বললেই চলে।
ডাকপিয়ন আর ডাকঘর যখন বাংলার ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে তখনো গ্রাম বাংলার কিছু স্থানে দেখা মেলে ডাকঘর ও ডাকপিয়নের। কিন্তু দেখা মেলে না সুকান্তের রানারের মতো খাকি পোশাক পরিহিত এক হাতে বর্শার মাথায় চিঠির বান্ডিল আর একহাতে লন্ঠন নেয়া কোনো চরিত্র। তারা এখন চলেন বাই সাইকেল কিংবা পার্সেলভরা ডাকবিভাগের গাড়িতে। দিনবদলের হাওয়ায় ডাকঘরের কার্যক্রম বদলে যাচ্ছে পার্সেল সার্ভিসে।
দরজা-জানালা বা গলির নাম নয়, ঠিকানা মানেই ই-মেইল ঠিকানা। এখন খামের পেছনে চুমু খাওয়ার দিন শেষ। এখন মুঠোফোনে কথার ভিড়ে কথা যায় ফুরিয়ে। এখন চোখ থাকে ইমেইল আর ফেসবুকের ইনবক্সে। কিন্তু চিঠিতে যে কথা সহজেই বলা যায়, সেই কথা কি মেইল কিংবা মুঠোফোনের ইথার তরঙ্গ ধারণ করতে পারে ? নাকি, চিঠির সেই আবেগ পৌছে যায় সুদূর প্রবাসী বন্ধুর কাছে।